ঘনাদা পরিচিতি

ঘনাদা বাংলা সাহিত্যের একটি জনপ্রিয় কাল্পনিক চরিত্র। ১৯৪৫ সালে প্রেমেন্দ্র মিত্র এই চরিত্রটি সৃষ্টি করেন। ঘনাদার প্রকৃত নাম ঘনশ্যাম দাস

ঘনাদা তাঁর মেসের প্রতিবেশী চার যুবককে নিজের জীবনের নানা অভিযান সম্পর্কে অবিশ্বাস্য ও আজগুবি গল্প মুখে মুখে বানিয়ে শোনান। ঘনাদার গল্পগুলি বানানো হলেও, এর অধিকাংশ তথ্যই বাস্তব ভিত্তিতে গৃহীত।

১৯৪৫ সালে দেব সাহিত্য কুটিরের পূজাবার্ষিকী আলপনা-য় ঘনাদা সিরিজের প্রথম গল্প "মশা" প্রকাশিত হয়। এই সিরিজের প্রথম বই ঘনাদার গল্প ১৯৫৬ সালে প্রকাশিত হয়।

মেসবাড়ির মজলিস

প্রেমেন্দ্র মিত্রের ঘনাদা সিরিজের সবকটি গল্পই ৭২ নং বনমালী নস্কর লেনের একটি মেসের প্রেক্ষাপটে লেখা| এই মেসের আর চারজন বাসিন্দা – শিবু, শিশির গৌর আর সুধীর (কথক) মাঝে-মাঝেই নানারকম চালাকি করে বা এমনিই ঘনাদাকে তোয়াজ করতে উসকে দেয় – আর তার ফলে শুরু হয়ে যায় ঘনাদার এক-একটি আজগুবি গল্প| বলা বাহুল্য ঘনাদাকে তোয়াজ করতে গেলে নানারকম সুখাদ্যের আর কোনো বিকল্প হয় না| এবং দু:খের বিষয় – প্রায় প্রতিটা গল্পের শেষেই গৌরের সিগারেটের টিন ঘনাদার হস্তগত হয়ে যায়, সেটা আর ফেরত পাওয়ার কোনো আশা থাকে না|

ঘনাদার এই সব গল্পগুলি আপাত দৃষ্টিতে আজগুবি হলেও এদের ভিত্তি বাস্তবসম্মত| এই সব গল্পে ঘনাদা নিজেই নায়ক – বিজ্ঞান থেকে অভিযান বা ইতিহাস থেকে পুরান – যেকোনো প্রেক্ষাপটেই গল্প বানাতে ঘনাদার কোনো জুড়ি নেই| বাস্তবের ঘনাদা মধ্যবয়স্ক ও সাধারণ চেহারার হলেও গল্পের ঘনাদা বুদ্ধিতে বা শক্তিতে অপরাজেয| আফ্রিকা থেকে আলাস্কা – পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই দুষ্টের দমন বা শিষ্টের পালন করার জন্য ঘনাদার ডাক পড়েছে|

শিবু, শিশির, গৌর বা সুধীর ছাড়াও এই মেসের অন্যান্য চরিত্রদের মধ্যে আছে রামভুজ নামের রাধুনি ঠাকুর বা বনোয়ারী – মেসের বাবুদের ফাই-ফরমাস খাটিয়ে – মাঝে মাঝেই বনোয়ারীর ওপর দায়িত্ব পড়ে এক চ্যাঙ্গারি সুখাদ্য সরবরাহ করার|

লেকের ধারের আড্ডা

বনমালী নস্কর লেনের এই মেসবাড়ি ছাড়াও কয়েকটি গল্পে বা উপন্যাসে লেকের ধারের সান্ধ্য-আড্ডায় ঘনাদাকে আসার জমাতে দেখা যায়| এখানে ঘনাদা আর সাধারণ ঘনাদা নয় – ইনি এখন ঘনশ্যাম বাবু| এই সব গল্পগুলিতে মেসবাড়ির মজলিশি আড্ডার পরিবর্তে গুরুগম্ভীর আলোচনার মেজাজ লক্ষ্য করা যায়| কথা-সাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্রের লেখনীর মুন্সিয়ানার দাপটে এখানে এসে হাজির হন ঘনাদার পূর্বপুরুষরা – ঘনাদা এই সব গল্পগুলির নায়ক নন, পরিবর্তে পৃথিবী রক্ষার দায়িত্বে আসেন ‘তস্য তস্য’ ব্যক্তিরা| ইনকা সাম্রাজ্যের পতন থেকে শুরু করে শিবাজীর আগ্রা থেকে পলায়ন – এইসব গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনায় ঘনাদার পূর্বপুরুষ গানাদো বা ঘনরাম দাসের অবদান - লেকের ধারের এই আড্ডা ছাড়া জানা কখনই সম্ভব ছিল না|

লেকের ধারের এই আড্ডার গল্পগুলিতে নায়িকার আবির্ভাব ঘটেছে ও কিছু পরিনত দৃশ্যেরও সূচনা হয়েছে, সেকারণে বলা যেতে পারে যে এই গল্পগুলি পরিনত বয়স্ক পাঠকদের কথা মাথায় রেখেই প্রেমেন্দ্র মিত্র লিখেছেন|

মৌকাসাবিস

লেখক প্রেমেন্দ্র মিত্রের বক্তব্য অনুসারে উনি ঘনাদা সিরিজ লেখা শুরু করেন বিজ্ঞান বা ইতিহাসের অজানা বা স্বল্প-জানা বিষয়গুলিকে শিশু ও কিশোর পাঠকদের কাছে তুলে ধরার জন্য – সেদিক থেকে লেখকের এই প্রয়াস সার্থক|

ঘনাদার গল্পে বলা সমস্ত অভিযানই নকল (পড়ুন গুল-তাপ্পি) হলেও যে সমস্ত বিষয় ও ঘটনার উপর এর সূচনা, সেগুলি সমস্তই বাস্তব-সম্পন্ন| মহাভারতের বিভিন্ন ঘটনার উপর ঘনাদার আলোকপাত রীতিমতো কৌতুকদ্দিপক|

বই

আনন্দ পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত ঘনাদা সমগ্র

ঘনাদার গল্প : মশা, পোকা, নুরি, কাঁচ, মাছ, টুপি, ছড়ি, লাট্টু
অদ্বিতীয় ঘনাদা : দাদা, ফুটো, দাঁত, ঘড়ি, হাঁস, সুতো
আবার ঘনাদা : ঢিল, ছুঁচ, শিশি
ঘনাদাকে ভোট দিন : ঘনাদাকে ভোট দিন, কেঁচো, মাছি
ঘনাদার নিত্য-নতুন : জল, চোখ, ছাতা, ঘনাদা কুলপি খান না
ঘনাদার জুড়ি নেই : তেল, ভাষা, মাপ, মাটি

কমিকস

জনপ্রিয় বাংলা বিজ্ঞান পত্রিকা কিশোর জ্ঞান বিজ্ঞান ঘনাদার গল্প নিয়ে পাঁচখানি কমিকস প্রকাশ করেছে – এই গল্প গুলি হলো

মশা, তেল, হাঁস, মাটি ও মঙ্গল গ্রহে ঘনাদা

এই সমস্ত কমিকসের চিত্রনাট্য অনিল কর্মকারের লেখা আর সাদাকালো ছবি এঁকেছেন গৌতম কর্মকার

আর বর্তমানে আনন্দ পাবলিশার্স জনপ্রিয় বাংলা শিশু কিশোর পত্রিকা আনন্দমেলার শারদীয়া সংখ্যায় নিয়মিত ভাবে সুবৃহত রঙ্গিন ঘনাদা কমিকস প্রকাশ করে থাকেন|

এইরকম কয়েকটি গল্প যেগুলি রঙ্গিন কমিকস হিসাবে পুন:প্রকাশিত হয়েছে সেগুলি হলো

মশা, পোকা, কাঁচ ইত্যাদি

রেডিও নাটক

ঘনাদার গল্প নিয়ে দুখানি শ্রুতিনাটক প্রযোজিত হয়েছে, সেগুলি হলো

মশা আর নুড়ি

এই নাটক দুটিতে ঘনাদার চরিত্রে কন্ঠ-সংযোজনা করেছেন শেখর চট্টোপাধ্যায়

তথ্য সুত্র : wikipedia